Monday, May 15, 2017

অকৃতজ্ঞ

-- কি ব্যপার কথা বলছো না যে? মন খারাপ? (সাদিয়া)
-- হ্যাঁ (লিমন)
-- কেন? কি হয়েছে?
-- তেমন কিছু না।
-- তাহলে মন খারাপ কেন?
-- বললাম তো, এমনিতেই।
-- ও বলবেনা? আমি এতই পর?
সাদিয়ার অভিমানী প্রশ্ন শুনে লিমন কিছুক্ষণ সাদিয়ার মুখের দিকে তাকালো। সাদিয়া মনে হয় খুবই কষ্ট পেয়েছে। তাই লিমন বাধ্য হয়েই বললো,
-- আমি যে বাসায় লজিং থাকতাম, ওখান থেকে আমায় বের করে দিয়েছে।
-- কি বলছো? কেন এমন করেছে ওরা?
-- আমি কিছু জানিনা সাদিয়া, হুট করেই ... এখন আমি কোথায় যাবো?
-- আপাতত নিজের বাসায় চলে যাও।
-- আমি বাসা থেকে রাগ করে বেরিয়ে এসেছিলাম।
সাদিয়া কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো, অতঃপর লিমনকে বললো,
-- একটা উপায় আছে।
-- কি?
-- আমাদের পাশের বাসায় এক আন্টির বাসায় লজিং শিক্ষক লাগবে। তুমি রাজী থাকলে আমি কথা বলে দেখতে পারি।
লিমন সাদিয়ার প্রস্তাবে রাজী হলো, সাদিয়াদের বাড়ির পাশে হওয়ায় সাদিয়াও রোজ লিমনকে দেখতে পেতো। যখন ইচ্ছে করতো তখন।
.
যখনই লিমন কোনো বিপদে পড়ে, সাদিয়া সেই বিপদ থেকে লিমনকে উদ্ধার করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। এই যেমন সাদিয়ার পাশের বাসায় লজিং থাকার কিছুদিন আগের ঘটনা.....
-- তোমার গলা এতো মিহি কেন? (সাদিয়া)
-- এমনিতেই! (লিমন)
-- এমনিতেই? বলবানা তো? ফোন রাখো। আর ফোন দিও না।
লিমন ফোন রেখে দিলো, সাদিয়া আবারও ফোন দিলো, লিমন কয়েকবার ফোন ধরলো না, কেটে দিলো। অতঃপর ফোন ধরে চুপ রইলো। 
-- এই, তুমি এমন কেন? ফোন রাখতে বললাম, আর রেখে দিলে?
-- হুম।
-- তুমি এখনো টিউশনির টাকা পাওনি তাই না? তাই না খেয়ে আছো? 
-- হুম, পাইনি।
-- তোমার বিকাশ একাউন্ট চেক করো, টাকা পাঠিয়েছি।
.....
যাই হোক, সাদিয়াদের বাড়ির পাশের প্রতিবেশীর কোনও ছেলে নেই। একটা মেয়ে আছে। মেয়েটা সাদিয়ার বান্ধবী, ওকেই টিউশনি পড়ায় লিমন। আর বাকী সময়গুলো বাড়ির ছেলের মতোই থাকে লিমন।
.
যে বাড়িতে থেকে টিউশনি পড়ায় লিমন, ঐ বাড়ির কর্তা লিমনকে নিজের ছেলের মতো দেখে। বাড়ির কর্তার ধনসম্পদের অভাব নেই। ওনাদের বাড়ির তুলনায় সাদিয়াদের বাসাটা কুড়েঘরের মতো লাগে। সাদিয়ার বাবা একজন সামান্য মোটরসাইকেল মেকানিক।
.
লিমনের মেধা দেখে সাদিয়ার বান্ধবী নাজিফার বাবা খুশি হয়ে লিমনকে ওনার ফ্যক্টরিতে ভালো পদে চাকুরী দেন। লিমন আস্তে আস্তে অনেক টাকাওয়ালা হয়। তারপর সাদিয়ার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সাদিয়া লিমনের কাছে যোগাযোগ বন্ধ করার কারন জানতে চাইলে লিমন বলে,
-- সাদিয়া, আসলে আমি বর্তমান যে পর্যায়ে আছি! এই পর্যায়ে তুমি একেবারেই আমার সাথে মানাও না। 
.
সাদিয়ার সাথে যোগাযোগ বন্ধের পিছনে আরও একটা বড় কারন হলো নাজিফা। নাজিফার সাথে লিমনের সম্পর্ক হয়ে গেছে, লিমনের দৃষ্টিতে
"নাজিফা স্টান্ডার্ড, আর সাদিয়া হলো সাদাকালো জগৎের কেউ "
.
লিমনের কথা শুনে সাদিয়া একটুও কাদলো না, বরং সেদিন খুব হেসেছিলো। তবে ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিলো সাদিয়ার।
.
লিমনের সাথে নাজিফার সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করলো,
-- নাজিফা, আমি বুঝছিনা। হঠাৎ তুমি আমায় এড়িয়ে যাচ্ছো কেন?
-- কারন তুমি আমার যোগ্য না লিমন।
-- কেন? আমার কি টাকাপয়সার খুবই অভাব?
-- টাকাপয়সার হিসেব বাদ। তুমি যখন না খেয়ে ছিলে, বিপদে পড়তে তখন আমার বান্ধবী সাদিয়া তোমার পাশে ছিলো। এখন তাকেই তুমি ছেড়ে এসেছো। আবার যদি আমার থেকে ভালো কাউকে পাও তবে আমাকেই যে ছাড়বেনা তার গ্যারান্টি কি?
.
লিমন নিরব। নাজিফার বাবা নাজিফার কথা শুনে লিমনকে চাকুরিচ্যুত করলেন,
-- তুমি এই মুহুর্তে চলে যাও...
-- স্যার আমার দোষ?
-- তুমি এই কাজের জন্য যোগ্য নও।
-- কেন আমি কি করেছি?
-- তুমি আজকে এই কোম্পানির ম্যানেজার, কার কারনে জানো?
-- কার কারনে?
-- আমি আমার মেয়ে নাজিফার কাছে সাদিয়া ও তোমার ব্যপারে সব শুনেছি। আমি ভাবতেই পারিনি তুমি এমন অকৃতজ্ঞ।
.
লিমনের চাকুরী চলে যাওয়ার পর প্রায় কয়েক লাখ টাকা ব্যাংকে ছিলো। বসে বসে খেলে রাজার ভান্ডার ও ফুরোয়, লিমনের সব টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পর লিমন আবারও একদিন না খেয়ে থাকলো। এরপর কয়েকদিন না খেয়ে থাকলেও কেউ তার পাশে এসে দাড়ালো না, এই মুহুর্তে সাদিয়াকে ভীষন মিস করছে লিমন। আসলেই হাতে একটা স্বর্ন থাকতেও স্বর্নের মূল্য বোঝেনি লিমন।

সংকলিত (ছান্দসিক পাথর)

No comments:

Post a Comment