Monday, May 15, 2017

স্বপ্নে সাঁজানো ভালোবাসা



রাত প্রায় দুটো!
ঘুমের ঘোরে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠে অভ্র। বিছানায় বসে অরুকে ফোন দেয় সে।
- অরু আমার খুব ভয় হচ্ছে!
এতোরাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনে চমকে উঠে অরু!
- কি হইছে তোমার?!!! কিসের ভয়?
.
অভ্র শান্ত গলায় বলে, - তোমাকে হারানোর ভয়!
- হারাবে কেন?
- আমার মত বেকার একটা ছেলের কাছে তোমার ফ্যামিলি তোমাকে বিয়ে দিবে?
- এখানকার ফ্যামিলি জব খোঁজে না!
- তাহলে?
- কিছুনা।
- প্লিজ বলো।
.
অরু খানিক সময় পর বলতে লাগলো,
- আমাদের সিলেটাঞ্চালে প্রথমে দেখে 'ছেলেটি 'UK'তে থাকে কিনা। নাহলে বড় ব্যবসা থাকতে হবে, এই আরকি....!
অভ্র মন খারাপের ভাব আড়াল করে বললো, - কিন্তু আমার তো কিছুই নেই।
অরু বললো, - সুন্দর একটা মন তো আছে!
- মন দিয়ে কি হবে অরু?
- আমাকে অনেক ভালোবাসতে পারবে না?
- হুম ভালোবাসি।
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস উপহার দিয়ে অভ্র ফোন রেখে দিলো। সে জানে, বাস্তবতা অনেক কঠিন! সেই কঠিন বাস্তবতা অরু তার ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে পারবে কি....?!
.
রাগ, অভিমান আর ভালোবাসার দুষ্টুমিষ্টি খুনসুটি মিলিয়ে ভালোই চলছিলো দিনকাল।
একদিন সন্ধ্যাবেলা, অভ্রের ফোনের স্ক্রিনে অরুর কল ভেসে উঠলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মেয়েটির কন্ঠ!
- অভ্র আগামী শুক্রবার আমাকে দেখতে আসবে!
- কে?
- ছেলেপক্ষ!
- ওয়াও ভালো তো।
- সিরিয়াসলি বলছি!
.
এবার অভ্রের চাঞ্চল্যতা থেমে গিয়ে বিষন্নতার রূপ নিলো।
অরু বলছে......
- ছেলের নাম রবিন! UK তে থাকে। সামনের মাসে দেশে আসবে। আর তখনই আমাদের বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবেন!!! (আম্মু বলছে)
.
ব্যাপারটা তখনও অভ্রের কাছে সিরিয়াসলি মনেহয়নি! কারন সে জানে, মেয়েরা প্রায়সময় ছেলেদেরকে বিয়ের কথা বলে ইমোশনাল করার চেষ্টা করে।
কিন্তু তার ভাবনার ঘোর ভাঙ্গলো প্রায় সপ্তাহ খানেক পর! অরুর ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভেট, নাম্বার অফ! সব যোগাযোগ বন্ধ!!!
.
.
ওপাশের মেয়েটি হয়তো ভালোবাসার রঙে অন্যের জগৎ রাঙিয়ে তোলার চেষ্টা করছে আর বেকার ছেলেটি তখন মরে যাওয়ার জন্য পায়তাড়া খোঁজছে!
.
এভাবেই নিঃশ্বেস হয়ে যায় একজন বেকার ছেলের স্বপ্নে সাঁজানো ভালোবাসা।
.
.
ষংকলিত (Akram Hussai)

ভালবাসা না মা? অতঃপর



-হ্যালো, আমি সায়মা
-এই নাম্বার কার?
-আমার আম্মুর, কিছু কথা ছিল তোমার সাথে আমার।
- কি বলবে বলো।
- এই আমাকে ঈদে কি দিবে, আমার আম্মু বলছে আমাকে কিছু কিনে দিবে না, তুমি তো আমার ফ্যামিলি খবর জানো।
-তুমি কি চাও বলো।
- আমার একটা শাড়ি হলেই হবে।
-ঠিক আছে।
-সায়মায় বাই।
-বাই।
জয়ের মাথায় আরেক চিন্তা আসে পরলো।
তার কাছে কোন টাকা নাই, আর তার মা তাকে আর কোন টাকা দিবে না বলে দিছে। কারন টাকা চুরি করে এই মেয়ের লেখা পড়ার খরচের জন্য দিতো।
এখন কি করবে মাথায় কোন উপায় না পেয়ে। একটা কথা মনে পরলো।
এক বড় ভাই না বলছে তার আম্মুর রক্ত লাগবে। আমার রক্তের পজিটিভ এর সাথে মিলে।
তাই বড় ভাইকে ফোন দিলো জয়। তারপর ১০০০টাকা রক্ত বিক্রয় করলো। পরে ৮০০ টাকা দিয়ে একটা শাড়ি কিনলো ।আর শাড়ি কিনে ২০০টাকা থাকে ।
যা দিয়ে সায়মার সাথে দেখা হলে কিছু খাওয়াতে পারে।
একদিন ফোন দিয়ে সায়মাকে খবর দিল স্কুলে পাশে কোচিং আসতে।
সায়মা ১১টা নাগাদ আসলো আর দোকান থেকে কিছু খাবার কিনে আনলো।
খাওয়া শেষ হলে শাড়িটা দিল কিন্তু সায়মা জানে না যে এই শাড়ি রক্ত বিক্রি করা টাকায় কিনা।
আর জানতে চায় নাই যে টাকা কই পাইলা তুমি।
s.s.c result দিল সায়মা পাইলো 4.88।
একমাস পর
-হ্যালো জয়।
-হা সায়মা বলো
-একটা কথা বলার ছিল।
-হা বলো কি বলবা।
-আমার কাবিন হয়েছে।
- মানে?
-আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১ আমার বিয়ে।
-জয় কি বলবে তা যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলছে।
- কথা বলো না কেন জয়?
-কি বলবো, বিয়ে কার সাথে।
-রহিম ফকির।
- মানে আওয়ামীলীগের নেতা যে।
-হা।
-আমার কথা কিছু মনে করলানা।
-এই কথা বললে আমার আব্বু গলায় দড়ি দিবে বলছে।
-বলো এখন কি করতাম।
-ঠিক আছে। সুখে থাকো।বলে ফোন রেখে দিল।
যে ছেলে কখন সিগারেট খাই নি সে ছেলে এখন কি না গাজা মদ আর সিগারেট খায় প্রতিদিন।
আসতে আসতে বিয়ে দিন ঘনিয়ে আসছে আর জয় একটা ভাল ছেলে থেকে হচ্ছে খারাপ নেশাখোর ছেলে।
জয় এক বন্ধু ফোন দিল যে তুই একটা বাজারে আসবি কথা আছে। পরে বাজারে গেল জয়। বন্ধু সায়মার না কি টাকা চাই টাকা।
কাউকে এত ভালবাসতে নাই রে বন্ধু।
এমন সময় পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরালো তা দেখে তো ওর বন্ধু সাজ্জাদ অবাক।
যে ছেলে না কি বই আর সায়মাকে ছাড়া কিছু বুঝত না।
সে না কি সিগারেট খায়।
পরে সাজ্জাদকে বললো, জয় বিয়ের দিন সাইমার বাড়ি আসবি আমি আসবো।দেখবো কেমনে কবুল বলে। পরে ১১ সেপ্টেম্বর আসলো। জয়কে দেখে তো সায়মা অবাক। পরে জয়ের সামানে ৯টা২৩ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড কবুল হলো।
সায়মা হাজব্যান্ডকে নিয়ে খুব সুখে আছে।
অন্যদিকে জয় সেই ১১ সেপ্টেম্বর বাড়ি ছাড়ছে আজ প্রায় চার বছর হতে চলছে তাও বাড়ি যায় নি।
এখন সায়মার প্রতি জন্মদিন একা একা কেক কাটে।
আর সায়মায় হইতো শশুরবাড়ির সবাইকে নিয়ে জন্মদিন পালন করে।
আর শেষ সেই কোচিং এ দেখা করার কথা মনে পরে প্রতি রাতে নেশা,
আর কান্না করে আমি ভাল নেই,আমি তো তোমার দেহকে ভালবাসি নাই তোমাকে ভালবাসে ছিলাম।
আমার জীবনটা কেন নস্ট করলা।
আমাকে কেন তুমি বাড়ি ছাড়া করলা সায়মা।
অসমাপ্ত এই গল্পটা ১০০% সত্যি।
আমার ডাইরির মাঝে লিখাছি।
আমি একটা সময় খুব ভাল ছিলাম। আমি আমার মা বাবা আমার পরিবারের খুব আদরের ছিলাম।
আমি আমার মাকে খুব বেশি পছন্দ করতাম না কিন্তু মা আমাকে অনেক আদর করতো
আমি আজ চার বছর ধরে আম্মুকে দেখি না
আর কখন চাইলেও পারবো না দেখতে ১৭ রোজার দিন মারা গেছে stock kore তাও আমার জন্য
আমি সেই দিন বিষ আর ঘুমের বড়ি খেয়েছিলাম।
এই খবর আমার আম্মু কিভাবে জানি শুনতে পাইছে।
পরে আমি তো ৬৪ ঘন্টা অজ্ঞান ছিলাম আর পরে মামা বলছে আম্মু না কি stock করছিলো আর জ্ঞান ফিরে নাই আমার মাত্র জ্ঞান ফিরছে ১০ মিনিট ও হই নি আমি এই অব্যস্থায় বাড়ি যাই। আম্মুকে দেখতে কিন্তু কপাল খারাপ আমাকে কাকারা দেখতে দেয় নি জীবনের শেষ দেখাও দেখতে পারি নাই আর মাটিও দিতে পারি নি।
এই অসুস্থ শরীর নিয়ে রাত আমার আম্মুর কবরের পাশে বসে ছিলাম একবার দেখার জন্য।
আমার বন্ধুরা আমার পাশে বসা ছিল

আমার হাত কাঁপতেছে বাকি কিছু আর লিখতে পারতেছিনা।
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
ছিল আমার যে কত সপ্ন
নষ্ট রক্তে হয়ে গেছে আজ কালো
 
সংকলিত (কষ্টের ফেরিওয়ালা)

শিরোনামহীন



রাহুল আর নিলয় দুই বন্ধু।
একই কলেজে পড়ে দুজন। বেশিরভাগ সময় এক সাথেই থাকে বলতে গেলে।
.
এইতো সেদিন রাহুল কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ নিলয়ের বাবার সাথে দেখা...
.
-- আস্সালামুআলাইকুম, আঙ্কেল...
.
-- অলাইকুমআস্সালাম, বাবা কোথায় যাচ্ছো.?
.
-- এইতো ক্যাম্পাসে যাচ্ছি আঙ্কেল। কেন কোনো দরকার আঙ্কেল?
.
-- বাবা রাহুল, এই টাকাগুলা রাখো। একটু কষ্ট করে নিলয়কে পৌঁছে দিয়ো। ওকে তো খুঁজে পেলামনা। মোবাইলও অফ। ও বলছিল ওর বই কেনার জন্য কিছু টাকা লাগবে।
.
-- চাচা,আপনি টেনশন করবেন না। নিলয়কে খুঁজে আমি টাকাটা পৌঁছে দিচ্ছি।
.
রাহুল টাকাটা নিয়ে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে নিলয়কে খোঁজে। দেখে গাছের আড়ালে নিলয় প্রেম করছে তার নতুন প্রেমিকার সাথে। নিলয়কে ডাক
দিয়ে এদিকে নিয়ে আসে রাহুল...
.
-- তোকে এই টাকা গুলা চাচা দিয়ে গেছেন।
.
-- যাক। টেনশান মুক্ত হলাম।
.
-- তোর নাকি বই কিনার কথা? একমাস আগে না কিনলি?
.
-- হ্যাঁ। এখন টাকা চেয়েছি কারণ গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিন তিনদিন পর। ওকে দামী গিফট করতে হবে।
.
রাহুল স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নিলয়ের বাবা সামান্য ব্যবসায়ী। সংসারই
চালাতে পারেন না ঠিকমতো। না জানি কত কষ্ট করেই নিলয়কে এই টাকাটা পাঠিয়েছেন। হয়তো এর জন্য ওনাকে না খেয়ে থাকতে হয়েছে , ধার করাও লাগতে পারে। আর নিলয় কিনা?!!
.
নিলয়ের বাবার কষ্টভরা আর চোখের জলে ভেজা মুখটা রাহুলের
স্মৃতিতে ভেসে এল।
নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না। খুব জোড়ে ঘুষি মারলো নিলয়ের নাক লক্ষ্য করে। রক্ত বেরিয়ে এলো ।
.
অতঃপর রাহুল নিলয়কে থুথু ছিটিয়ে পেছন ফিরে চলে আসতে লাগলো ।
.
আর ভাবতে লাগলো...
এতোদিনে হয়তো একটা ভাল কাজ করতে পেরেছি...

মনুষ্যত্ত্ব



ছেলেটা হল থেকে বের হলো মাত্র। বাসায় যাবে তাই রিক্সা করে সিএনজি স্টেশনে নামতেই এক আগন্তুক এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলতে লাগলো–
:- ভাই! আমি খুব বিপদে পড়েছি! একটু হেল্প করতে পারবেন!?
:- (ছেলেটা চিন্তিত! এই এতো ভালো শার্ট পেন্ট পরিহিত তারপর পাশে আবার এক আধো বয়স্ক ভদ্র মহিলা'কে নিয়ে এতো লোকের ভিড়ে ভদ্র লোকটা আমার মতো একজনের কাছে সাহায্য চাইতে আসবে কেন! তারপরও সাহায্য চাওয়া তো আর দোষের কিছু না। চাইতেই পারে তাই আর আগ বাড়িয়ে কিছু চিন্তা না করেই বললো–) কি বিপদ ভাই?
:- ভাই! এই বয়স্ক মহিলা আমার "মা"। সেই সকাল থেকে কিছু খায় নাই! কিছু টাকা দিতে পারবেন!?
:- (ছেলেটা ভালোই চিন্তায় পড়লো! কোথাকার কোত্থেকে এসেছে কে জানে! তারপর আবার ভাল মানের পোশাকআশাকও পরিহিত। কে জানে বাবা! কোন কুমতলব নেই তো! কথাবার্তায় মনে হচ্ছে না এখানকার স্থানীয়। তবুও বিপদ তো হতেই পারে। তাই জিজ্ঞেস করলো–) আপনারা আসছেন কোত্থেকে!?…
এবার লোকটা অনেকটা কান্না জড়িত স্বরে বলতে লাগলো,
:- ভাই! আমি জানি, আমার এই শার্ট পেন্ট দেখে আপনি হয়তো ভাবছেন আমি আপনার কাছে টাকা চাই কেন!? অবাক হবেন না ভাই, বিপদআপদ তো মানুষেরই হয়। আমার অসুস্থ ভাইকে দেখতে এসেছি মা'কে সাথে করে। কিন্তু ভাই! দুর্ভাগ্য আমার যে, আমার মোবাইলসহ টাকাকড়ি যা ছিল সাথে সবই পকেটমার নিয়ে গেছে! আমি এসেছি ভাই কিশোরগঞ্জ থেকে। এখন পর্যন্ত ভাইকে তো দেখতে যেতেই পারলাম না তার উপর "মা" সেই সকাল থেকে উপোষ! পেটে একটুখানি দানাপানিও পড়েনি! যার কাছেই যেয়ে বলি সেই দুরদুর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। ভাই আমি মিথ্যা বলছি না, ভাই…
আপনি বিশ্বাস না করলে এ এই দেখেন, দেখেন আমার পকেট, ব্যাগ। মা'য়ের টাও দেখেন।…
:- ( ভাবছি, কি অদ্ভুত! তার কার্যকলাপে কখন যে চোখজোড়া একটু ঝাপ্সা হয়ে উঠেছে টেরি পাইনি। লোকটা নিশ্চয় বিপদে আছে তা নাহলে এভাবে সে তার পকেট-ব্যাগ এমনকি মা'য়ের ব্যাগ পর্যন্ত কেন আমাকে দেখাতে যাবে!? তাও কি করবো ভেবে না উঠতে পেরে বললাম–) আচ্ছা! আসলে আমি স্টুডেন্ট কিন্তু আপনার চাহিদামত কোন প্রয়োজন তো আমাকে দিয়ে হবে না!
:- আপনি শুধু ৪০/৫০ টাকা দিলেই হবে এখন। মা'য়ের খুব ক্ষুধা পেয়েছে। মা'কে কিছু খাওয়াবো। আর বাকীটা দেখি কি করতে পারি।…
:- পকেটে দুইশত টাকা ছিল। আমার ভাড়ার প্রয়োজন ত্রিশ টাকা। এটা রেখে বাকী সবটা দিয়ে দিলাম।
ছেলেটা এখন সিএনজি'তে। বাসায় যাচ্ছে। সে অনুভব করছে, টাকাটা পেয়ে ভদ্র লোক আর মহিলা এতোটা খুশি হয়েছে যে শুধু পারলো না তাকে মাথায় নিয়ে ঘুরতে! অবশ্য সেদিনের মুখোমুখি যদি না হতো ছেলেটা তাহলে হয়তো অন্যজনদের মতো সেও এদের তাড়িয়ে দিতে কিঞ্চিত ভাবতো না। যেদিন পকেটে পর্যাপ্ত টাকা থাকা সত্বেও পকেটে টাকা আছে মনে করে ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়ে বাসে করে স্টারলাইন কাউন্টার অব্ধি এসে যখন কন্টাক্টারকে ভাড়া দিতে গিয়ে পকেট হাতড়ে দেখে টাকা নেই! তখন কয়েকবার ভাড়া চাওয়ার পর আশেপাশে কয়েকজনের কাছে ছেলেটা টাকা চায় কিন্তু সবাই ফিরিয়ে দিলে সে শেষমেশ কন্টাক্টারকে ডেকে বলে ভাই, আমি টাকাটা বাসায় ফেলে এসেছি! পকেটে একটা পয়সাও নেই যে তোমার পাওনা ভাড়াটা দিতে পারি। ভেবেছিল কন্টাক্টার তাকে নোংরা ভাষায় কিছু বলবে। কিন্তু যা বললো তা ছিল কল্পনাতীত। বললো, আগে বললে তো আর এতো বার ভাড়া চাইতাম না ভাই! আপনি নামবেন না?…

সংকলিত (Sakiye Kawsar)

রঙ্গিন স্বপ্ন



-মা দেখেন না আপনার ছেলে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে না?


-আস্তে সব কথায় আম্মাকে ডাকতে হয় নাকি।কে বলছিলাম হাত কাটতে হু।এখন চামচ দিয়ে খাও।আমি খাইয়ে দিতে পারব না।


-এখন দোষ'ত আমারি তোমার জন্য রান্না করতে গিয়ে'ইত হাত কাটছি।


-এ কচু আজকের রান্নাটা ত আর তুমি কর নাই।


-কীভাবে করব হু হাত'ত কেটে গেছিল।
-ভাল হয়ছে এখন বাম হাত দিয়ে খাও।
.
এটা বলে আমার হেসে উঠা দেখে ও রাগে ফুসতে লাগল।তারপর জোরে আম্মাকে ডাক দিল।অতঃপর আম্মার রুম থেকে।
.
-কি হল বউমা?
-দেখেন না মা আপনার ছেলে আমাকে যা তা বলতেছে।আমি নাকি শুধু খাইতে জানি রান্না করতে জানি না।আর আমাকে খাইয়ে না দিয়ে উল্টো বলতেছে আমি নাকি বাম হাত দিয়ে খেতাম।
.
কথাটা শুনে তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলাম।শুধু খাইতে জানে রান্না করতে জানে না এসব কখন বললাম আবার।এটাত বউ না পুরাই ঝালমরিচ সবখানে জামাইকে ফাসানোর চেষ্টা।অতঃপর আম্মার আগমন।আমার দিকে বিরাট রাগের লুক নিয়ে।
.
-তাড়াতাড়ি খাইয়ে দেয়।আমি একটু পর এসে যদি না দেখি তাহলে তোর দুই দিন খাওয়া বন্ধ।
.
এটা বকে আম্মা চলে গেল।আমার বেকুবের মত চেহারা দেখে যেন ওনার মুখে হাসির রুল পড়ল।ইচ্ছে করছে কাছে গিয়ে গালে একটা কামড় দিয়ে দি'ই।অতঃপর খাইয়ে দিতে শুরু করলাম।
.
-ওকে এখন যান।আমি আমার পেট ভরি।
-আমার হাত যদি না কাট'ত আমিও আমার বরটাকে খাইয়ে দিতাম।
-অবুক তাই আমাকে আম্মার কাছ থেকে বকা শুনিয়ে এখন আবার পাম্প দিচ্ছে।যান গিয়ে ঔষুধ খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।
.
-এই আমাকে কোলে করে রুমে দিয়ে আস'ত।
.
সিড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকে কথাটা বলে ব্যাথা পাওয়ার বনিতা করতে লাগল।
.
-পায়ে কি হল আবার?
-সিড়ি দিয়ে উঠার সময় ব্যাথা পাইছি।
-ও তাই দেখিত কোন পায়ে ব্যাথা পাইছ আর ও মুছড়ে ভেঙে দি'ই।
-কি আম্মা!!
.
এটা বলে জোরে আম্মা বলে ডাক দেওয়ার সময় মুখটা চেপে ধরে বললাম।
.
-আচ্ছা আচ্ছা নিচ্ছি।
-হিহিহি নাও কোলে নাও?
-এত বড় আঠার বস্তাটাকে তুলতে পারব কিনা সন্দেহ।
-কি আমি আঠার বস্তা।
.
এটা বলে বাম হাত দিয়ে জোরে জোরে বুকে কিল ঘুষি দিতে লাগল।
.
-এই তুমি না ব্যাথা পাইছ?এত শক্তি পেলে কোথা থেকে ব্যাথা পাচ্ছি ত?
-নিবা নাকি আর ও দিব।আর আমি আঠার বস্তা?
-না না আলিয়া



এই বলে কোলে নিলাম।দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে হাসতে লাগল।যত'ই হোক আমার বউটাকে হাসিতে কিন্তু ধারুন সুন্দর লাগে।
.
সংকলিত (রক্তাক্ত লেখক হিমু)

স্বার্থপর ভালোবাসা



--তুমি কি সত্যিই চলে যাবা(তাসিন)
--হুমম (ফারিয়া)
--না গেলে হয় না?
--নাহ হবে না। আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই
--তাই বলে আমার ভালোবাসাটা শেষ করে
--এগুলো ভালোবাসা কিসের। প্রয়োজন ছিলো তোমার হাত ধরার ধরেছি। এখন সব শেষ।
--তুমি না আমায় বলেছিলা আমার জন্য সব করতে পারবে
--এটা ভুল ছিলো। আর এখন আমি বিদায় নেব এটাই ঠিক। আমার আমেরিকা থেকে উচ্চশিক্ষা নিতেই হবে।
--আচ্ছা ভালো কথা। কিন্তু আমার ভালোবাসাটা অন্তত ভুলো না। আমি অপেক্ষা করতে রাজি আছি।
--লাগবে না ভালোবাসা। এমনিতেই পারব চলতে।
--সত্যিই কি পারবে?
--হুমম তো কি?
--তুমি ভুল করছো
--যা খুশি করছি। তুমি এখান থেকে যাও
..অসহ্য একটা
.
কিছুই বলার নেই আর তাসিনের। নিজেকে খুব একা লাগছে তার এমনটা যে হবে কখনও ভাবে নি। পড়াশোর জন্য ভালোবাসাটাকে কবর দিলো।
ও কি বুঝে না জীবনে কতটা প্রয়োজন ভালোবাসা। একদিন হয়তো বুঝবে কিন্তু থাকবো না আর আমি। শত আর্তনাদ ও আমায় আর ছুঁতে পারবে না।
আমি নিজেই আজ শেষ করে দিলাম সব। আমি আর ফিরব না কখনও তার ডাকে।
তাসিন তা ভাবছে আর কাঁদছে।
.
.
খুব বেশি ভালোবাসতো। তিন বছরের সম্পর্ক কখনও কোনোদিন রিয়ার কথার অবাধ্য হয় নি। তবুও তাকে ছেড়ে সে চলে যাবে তার মূল্যবান পড়াশোনার জন্য। একটা মন ভাঙ্গায় কতটা কষ্ট সে যদি বুঝতো তবে কখনও এমনটা করতো না। তাসিন সেই ছেলেটা যে প্রতিদিন তার প্রিয় আইসক্রিম তাকে দেওয়া থেকে নিয়ে ঘুমুবার আগে শুভ রাত্রি পর্যন্ত সব কিছু ও করতো।
ফারিয়ার ভালো লাগতো গান শুনতে
প্রতিটাদিন গান শুনাতো। অনেকবার তাকে এক্সিডেন্ট এর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে এক্সিডেন্ট হয়েছে।
কিন্তু এরপরও সে বুঝলো না। তার পড়াশোনাটাকেই প্রধান ভাবলো।
.
এরপর তাসিন আর শহরটায় থাকে নি।
চলে যায় অন্য কোথায়। দিন যেতে যেতে বছর তিনেক এ পা রাখলো।
ফারিয়া তার কাঙ্ক্ষিত কার্যকলাপ সম্পন্ন করে দেশে ফিরলো।
বেশ কয়েকটা দিন বাসায় ই ছিলো
এরপর একটু একটু করে এদিক সেদিক
ঘুরাফেরা করতে বের হয় সে। কিন্তু পথগুলো তে যে মিশে আছে নানান স্মৃতি। সে সবচেয়ে মিস করে এখন কোনো একটা মানুষের কার্যকলাপগুলো। দিন যেতে লাগলো আর ফারিয়ার অস্থিরতা বাড়তে লাগলো। খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা শুরু করলো কোথায় সে।কিন্তু কাউকেই পাচ্ছে না তাকে বলার সে কোথায় আছে।একদিন বিকালে ঘুরতে বের হলে হঠাৎ দেখা পায় তার এক বন্ধুর সাথে যে সবকিছু জানতো তার আর তাসিনের সম্পর্কে। তাকে পেয়েই জিগ্যেস করলো,
--তাসিন কই জানো তুমি?
--কেন?
--আমার ওরে লাগবে
--কি করবা। আবার আঘাত করতে
--নাহ। আমি ওরে ফিরে চাই
--সেটা তো তাসিন ই বলেছিলো। সে হারিয়ে যাবে
--আমি ওকে খুঁজবো তুমি বলো কোথায় পাব
--ওহহ তাই।
--বলো আমায়
--পাবে না খোঁজে।
--কেন?
--তা জেনে তুমি কি করবা? তোমার ত এখন সব হয়েছে তোমার ত মানুষের অভাব হওয়ার কথা না।
--প্লিজ তুমি বলো ও কোথায়? আমি ওরেই চাই প্লিজ বলো আমায়
--দুঃখিত। তোমার স্বার্থপরতায় তাসিন নামক কোনো একটা ছেলের মৃত্যু হয়েছে এটা বুঝে নাও। শত চেষ্টা করেও পাবে না। এটা বলে দিলাম।তুমি তোমার মত বাঁচো গিয়ে
.
ফারিয়ার কান্নাগুলো ও তাসিনের বন্ধুর মনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারলো না।
শত চেষ্টায়েও কাজ হবে না আর যেখানে স্বার্থ আগে সেখানে ভালোবাসা মৃত। আর সেটাই হয়ে গেলো তাসিন ফারিয়ার ভালোবাসায়। তার আর্তনাদগুলো আজ আর তাসিনের মনে সাঁড়া ফেলবে না।বিশ্বাস বড় অদ্ভুত ব্যাপার যা একবার নষ্ট হলে ফিরে পাওয়া খুব কঠিন আর যদি বিশ্বাসটা ভঙ্গ হয় কোনো স্বার্থপরতায় তাহলে তো
একেবারই অসম্ভব। যার ফলেই তো সব শেষ হয়ে গেলো তাদের ভালোবাসার................!!!!







সংকলিত (মুসাফির)

অকৃতজ্ঞ

-- কি ব্যপার কথা বলছো না যে? মন খারাপ? (সাদিয়া)
-- হ্যাঁ (লিমন)
-- কেন? কি হয়েছে?
-- তেমন কিছু না।
-- তাহলে মন খারাপ কেন?
-- বললাম তো, এমনিতেই।
-- ও বলবেনা? আমি এতই পর?
সাদিয়ার অভিমানী প্রশ্ন শুনে লিমন কিছুক্ষণ সাদিয়ার মুখের দিকে তাকালো। সাদিয়া মনে হয় খুবই কষ্ট পেয়েছে। তাই লিমন বাধ্য হয়েই বললো,
-- আমি যে বাসায় লজিং থাকতাম, ওখান থেকে আমায় বের করে দিয়েছে।
-- কি বলছো? কেন এমন করেছে ওরা?
-- আমি কিছু জানিনা সাদিয়া, হুট করেই ... এখন আমি কোথায় যাবো?
-- আপাতত নিজের বাসায় চলে যাও।
-- আমি বাসা থেকে রাগ করে বেরিয়ে এসেছিলাম।
সাদিয়া কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো, অতঃপর লিমনকে বললো,
-- একটা উপায় আছে।
-- কি?
-- আমাদের পাশের বাসায় এক আন্টির বাসায় লজিং শিক্ষক লাগবে। তুমি রাজী থাকলে আমি কথা বলে দেখতে পারি।
লিমন সাদিয়ার প্রস্তাবে রাজী হলো, সাদিয়াদের বাড়ির পাশে হওয়ায় সাদিয়াও রোজ লিমনকে দেখতে পেতো। যখন ইচ্ছে করতো তখন।
.
যখনই লিমন কোনো বিপদে পড়ে, সাদিয়া সেই বিপদ থেকে লিমনকে উদ্ধার করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। এই যেমন সাদিয়ার পাশের বাসায় লজিং থাকার কিছুদিন আগের ঘটনা.....
-- তোমার গলা এতো মিহি কেন? (সাদিয়া)
-- এমনিতেই! (লিমন)
-- এমনিতেই? বলবানা তো? ফোন রাখো। আর ফোন দিও না।
লিমন ফোন রেখে দিলো, সাদিয়া আবারও ফোন দিলো, লিমন কয়েকবার ফোন ধরলো না, কেটে দিলো। অতঃপর ফোন ধরে চুপ রইলো। 
-- এই, তুমি এমন কেন? ফোন রাখতে বললাম, আর রেখে দিলে?
-- হুম।
-- তুমি এখনো টিউশনির টাকা পাওনি তাই না? তাই না খেয়ে আছো? 
-- হুম, পাইনি।
-- তোমার বিকাশ একাউন্ট চেক করো, টাকা পাঠিয়েছি।
.....
যাই হোক, সাদিয়াদের বাড়ির পাশের প্রতিবেশীর কোনও ছেলে নেই। একটা মেয়ে আছে। মেয়েটা সাদিয়ার বান্ধবী, ওকেই টিউশনি পড়ায় লিমন। আর বাকী সময়গুলো বাড়ির ছেলের মতোই থাকে লিমন।
.
যে বাড়িতে থেকে টিউশনি পড়ায় লিমন, ঐ বাড়ির কর্তা লিমনকে নিজের ছেলের মতো দেখে। বাড়ির কর্তার ধনসম্পদের অভাব নেই। ওনাদের বাড়ির তুলনায় সাদিয়াদের বাসাটা কুড়েঘরের মতো লাগে। সাদিয়ার বাবা একজন সামান্য মোটরসাইকেল মেকানিক।
.
লিমনের মেধা দেখে সাদিয়ার বান্ধবী নাজিফার বাবা খুশি হয়ে লিমনকে ওনার ফ্যক্টরিতে ভালো পদে চাকুরী দেন। লিমন আস্তে আস্তে অনেক টাকাওয়ালা হয়। তারপর সাদিয়ার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সাদিয়া লিমনের কাছে যোগাযোগ বন্ধ করার কারন জানতে চাইলে লিমন বলে,
-- সাদিয়া, আসলে আমি বর্তমান যে পর্যায়ে আছি! এই পর্যায়ে তুমি একেবারেই আমার সাথে মানাও না। 
.
সাদিয়ার সাথে যোগাযোগ বন্ধের পিছনে আরও একটা বড় কারন হলো নাজিফা। নাজিফার সাথে লিমনের সম্পর্ক হয়ে গেছে, লিমনের দৃষ্টিতে
"নাজিফা স্টান্ডার্ড, আর সাদিয়া হলো সাদাকালো জগৎের কেউ "
.
লিমনের কথা শুনে সাদিয়া একটুও কাদলো না, বরং সেদিন খুব হেসেছিলো। তবে ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিলো সাদিয়ার।
.
লিমনের সাথে নাজিফার সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করলো,
-- নাজিফা, আমি বুঝছিনা। হঠাৎ তুমি আমায় এড়িয়ে যাচ্ছো কেন?
-- কারন তুমি আমার যোগ্য না লিমন।
-- কেন? আমার কি টাকাপয়সার খুবই অভাব?
-- টাকাপয়সার হিসেব বাদ। তুমি যখন না খেয়ে ছিলে, বিপদে পড়তে তখন আমার বান্ধবী সাদিয়া তোমার পাশে ছিলো। এখন তাকেই তুমি ছেড়ে এসেছো। আবার যদি আমার থেকে ভালো কাউকে পাও তবে আমাকেই যে ছাড়বেনা তার গ্যারান্টি কি?
.
লিমন নিরব। নাজিফার বাবা নাজিফার কথা শুনে লিমনকে চাকুরিচ্যুত করলেন,
-- তুমি এই মুহুর্তে চলে যাও...
-- স্যার আমার দোষ?
-- তুমি এই কাজের জন্য যোগ্য নও।
-- কেন আমি কি করেছি?
-- তুমি আজকে এই কোম্পানির ম্যানেজার, কার কারনে জানো?
-- কার কারনে?
-- আমি আমার মেয়ে নাজিফার কাছে সাদিয়া ও তোমার ব্যপারে সব শুনেছি। আমি ভাবতেই পারিনি তুমি এমন অকৃতজ্ঞ।
.
লিমনের চাকুরী চলে যাওয়ার পর প্রায় কয়েক লাখ টাকা ব্যাংকে ছিলো। বসে বসে খেলে রাজার ভান্ডার ও ফুরোয়, লিমনের সব টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পর লিমন আবারও একদিন না খেয়ে থাকলো। এরপর কয়েকদিন না খেয়ে থাকলেও কেউ তার পাশে এসে দাড়ালো না, এই মুহুর্তে সাদিয়াকে ভীষন মিস করছে লিমন। আসলেই হাতে একটা স্বর্ন থাকতেও স্বর্নের মূল্য বোঝেনি লিমন।

সংকলিত (ছান্দসিক পাথর)

জীবনের নিষ্ঠুর বাস্তবতা

গৃষ্মের শুরুর দিক! দুপুরের কড়া রোদের মধ্যে পাশের গলি দিয়ে হেটে চলেছে সায়ান... সকাল থেকে কিছু না খাওয়াই পা যেন আর উঠছেনা ছেলেটির। বুঝতে পারছি কেন জানি আজ আমাকে বেকার জীবন কুড়েকুড়ে খাচ্ছে! অনেক শুনেছি বিপদের সময় কেউ পাশে থাকেনা কিন্ত এই প্রথম বাস্তবে তাই বুঝতে পারছি। আজ কেউ নেই সায়ানের জন্য অহেতুক আশ্বাস দেখিয়ে কথা বলার মত। অনেক কষ্ট হচ্ছে সময়টাকে বিশ্বাস করতে! (এগুলোই পথ চলতে চলতে ভাবছে সায়ান) ইতিমধ্যে গা ঘেমে গেঞ্জিটা ভিজতে শুরু করেছে।

বিকেলে একটা বেঞ্চে বসে আছে সায়ান, কিছু একটা ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে অঝরে পানি পড়ছে ছেলেটির। কান্নার কোন শব্দ নেই তবুও যেন চোখের পানি বাধ মানছে না। কি অদ্ভুত পরিস্থিতির সম্মুখিন আজ। কৈ কেউ নেইতো আজ আমার পাশে। এমনকি পরিবারও পাশে নেই আজ! শুরু হতে লাগলো মনের রক্তক্ষরন। ভালো সময়ে অনেকেই বন্ধু হয়। কিন্ত
কেউ বেকারের বন্ধু হয় না, ফোনটা হাতে নিয়ে প্রায় কয়েক জনকে ফোন দিলাম। কেউ কেউ রিসিভ করলো না আবার কেউ কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনটা রেখেদিলো। কষ্টের মাত্রাধীক বেড়ে গেলো, এটাই বুঝি বন্ধুত্ব!

সময়টা বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যায় অতিক্রম করার মত। বেঞ্চ থেকে উঠে এ.টি.এম থেকে কিছু টাকা তুললো সায়ান, পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট। সেখানে গিয়ে একটু খাবার খেয়ে নিলো, সারা দিন কিছু না খাওয়াই তেমন কিছুই খেতে পারলো না সে।

সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেলো একটি নৈশক্লাবে, অনেক শুনেছি রঙ্গ-মঞ্চে মন ভালো করার ওষুধ পাওয়া যায়.., একবার দেখিই না গিয়ে. কেমন লাগে! সায়ান যে এখানে নতুন, কথনো আশা হয় নি। ভেতরে ঢোকার কিছুক্ষনপর আলো নিভে অন্ধকার হয়ে গেল, এ যেন এক অন্যরকম পরিবেশ। বিভিন্ন প্রকার লাইটিংএর সাথে রিমিক্স গানে বুকটা কাপতে লাগলো সায়ানের...

ভেতর থেকে একটা সিগারেট নিলো সায়ান, ঠোটে লাগিয়ে আগুন দিয়ে টান দিতেই একগাদা ধোয়া গিয়ে বুকটা আটকে গেল.. খকখক করে কয়েকবার কাঁসতে লাগলো সায়ান। তবুও দুই আঙ্গুলের মাঝে সিগারেটটি ধরা আছে, অনেক শুনেছি সিগারেটের আগুন মানুষের কষ্টগুলোকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়! আজ দেখিই না কেমন করে?

সামনেই নাইটক্লাবের মেয়েরা হেলেদুলে নাচতে শুরু করেছে, পরিবেশটা মৃদু ঝকমকে আলোই দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। বিপরীত পাশের টেবিলে একটি লোক বসা সামনের বোতল থেকে কি যেন গ্লাসে ঢেলে ডকাডক খাচ্ছে। লোকটির হাতের ইশারাই আমায় ডাকদিলো। তার টেবিলে তারই পাশে গিয়ে বসলাম, লোকটি বলল-

-- কি.কষ্ট, কষ্ট?

তখন চুপচাপ লোকটির কথা শুনে তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে সায়ান। তার চোখ দুটিই যেন বলে দিতে পারে তার মধ্যে কতটুকু কষ্ট লুকিয়ে রাখা। কতটা স্বপ্ন ভাঙ্গার বেদনার যন্ত্রনা। 

-- শোনো জীবনটা এত সহজ না । সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করাই জীবনের আসল পরিচয় ।

লোকটির কথা শুনে যতটানা হতাশ হয়েছি তার থেকে বেশি চমকে যায় সায়ান। সামনের বোতলটা নিচ করে গ্লাসে ঢেলে দুচোখ বন্ধ করে ঢকঢক করে একগ্লাস খেয়ে নেয় সায়ান।

বিকট গন্ধে গলাটা জ্বলে যাচ্ছে! একটু পর বুঝতে পারলাম চারদিকটা এলোমেলো মাথাটা ঝিনঝিন করছে। সারা শরীর যেন হালকা হতে লাগলো, কিন্ত মাথাটা ভীষন ভারীি অনুভব করলাম। বোতল নিচ করে আরো এক গ্লাস ঢালতে গেলে লোকটির বাধা পায় সায়ান। রাত ঠিক কতটুকু জানা নেই, চোখে যেন সবকিছু ঝাঁপসা।
  
লোকটি বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে, লোকটি যাওয়ার পর বুক কাপানো গানের তালে নিজেকে হারিয়ে ফেলে সায়ান। ঠিক কি হতে লাগলো কিছুই মাথায় ঢুকলোনা। ঢুকানোর চেষ্টাও করে না সায়ান। একটু পর বাইরে চলে আসে। মাথাটা টলটল করছে. ঠিক দিক ঠিক করতে পারছিনা। হঠাত দ্রুত গতির একটা গাড়ি সামনে এসে ব্রেক করলো। বুকটা দুরু দুরু কেপে উঠে সায়ানের। লোকটি বলল এই যে ভাই রাস্তার সাইডে মাতলামির জায়গা আছেতো। আমি যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি এক অজানা নিরুদ্বেশে।
  
রাস্তার ল্যাম্পপোষ্টের নিচে হঠাত বসলো সায়ান, একটু চিন্তার জগতে চলে গেলো ছেলেটি আসলেই কি আমি এমন? কেন আমি আজ নষ্ট ছেলেদের মত রাস্তায় মাতালের মত বেড়াচ্ছি? তাহলে কি আমি আজ নষ্ট ছেলে?

রাস্তার মাঝে চিৎকার করে বলতে লাগলো সায়ান, আমি নষ্ঠ ছেলে না, আমিও বাচতে চাই অন্য সবার মত, আজ বেকার বলে এভাবে সবাই ধিক্কার জানায় কেন? বলতে বলতে বাসার দিকে রাওনা দিলো সে। হয়তো তার এই চিৎকার কেউ শুনছেনা, কেউ বুঝতেও পারছেনা তার এখনকার মনের অনুভুতি, কিন্ত সাবাই তার বাইরের অনুভিতি ঠিকই বুঝতে পারবে ।

সংকলিত (নীল শফিক)