Wednesday, December 27, 2017

Phool

-দোস্ত,আমায় কিছু টাকা ধার দিবি?
-কত?(সিফাত)
-২০০০-এ হবে।
-অত টাকা তো আমার কাছে নাই।
-প্লিজ দোস্ত, একটু মেনেজ কর।কাল বাড়ি যাব,ছোট বোনের জন্যে ড্রেস কিনতে হবে।কিন্তু গাড়ি ভাড়া ছাড়া আর কোন টাকা নাই আমার কাছে।কিন্ত ড্রেস না নিলে যে,বোন রাগ করবে।
-আচ্ছা দেখি।
.
সিফাত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র ছেলে।ভার্সিটিতে পড়ে।কিন্তু কখনো তাকে ভিন্ন ড্রেসে দেখা যায়নি।এক শার্ট দিয়েই কয়েক মাস কাটিয়ে দিয়েছে।জুতা গুলোর অবস্থা খারাপ।সেলাই করতে করতে জুতা গুলোতে আর জায়গা নেই।আর সেই মানুষটার কাছে কিনা টাকা ধার চায়।
হাহাহা,হাসে সিফাত।
কিন্তু সে বন্ধুর কথা ফেলতে পারেনা।মরিয়া হয়ে উঠে টাকার জন্যে।কিন্তু পকেটে তো ১০০টাকা ছাড়া আর টাকা নেই।
ও হে!মনে পড়েছে কিছু জমানো টাকা আছে।স্বর্গীয় হাসি হেসে সিফাত।কিন্তু না এই টাকা দেয়া যাবেনা।এই টাকা সে জমিয়েছে নিরার বার্থডে গিফট কিনবে বলে।
নিরা সিফাতে সুখে দুঃখের সাথী।উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে নিরা।তার সাথে সিফাতের সম্পর্ক ১ বছরের।এই ১বছরে সিফাতের সাথে নিরা যতবার দেখা করেছে,ততবার-ই সিফাতকে এক শার্ট এ দেখে এসেছে নিরা।নিরা বুঝে সিফাতের কষ্ট।তাই কখনো সিফাতকে কিছু বলেনি।শুধু বলেছে-
-এই শার্ট-এ তোমাকে বেশ মানায়।
সিফাত নিজেকে অপরাধী মনে করে।সে কখনো নিরাকে কিছু দিতে পারেনি।রেস্টুরেন্টে ববসে একসাথে নাস্তা করা,রিকশা ভাড়া সহ সব খরছ বহন করেছে নিরা।কিন্তু মেয়েটা তবুও সিফাতকে কিছু বলেনা।কি বোকা মেয়েটা,আমার কিছু না থাকা সত্ত্বেও আমার সাথেই থাকে-সিফাত ভাবে।
সিফাত সিদ্ধান্ত নেয়,টাকা গুলো তার বন্ধুকে দিয়ে দেবে।নিরার জন্যে গিফট না কিনলেও হবে।মেয়েটা কিছু বলবেনা।

সিফাতের হাতে কমদামী সিগারেট।আজ তার অনেক কষ্ট।কেউ একজন বলেছিল,সিগারেট খেলে সিগারেটের ধোয়ার সাথে সাথে কষ্ট গুলো বাষ্প হয়ে যায়।কিন্তু এত সিগারেট খাওয়ার পর ও তো সিফাতের কষ্ট কমছেনা।বরং কষ্ট গুলো তাকে আরো জোরে গ্রাস করছে।
আজ নিরার জন্মদিন।নিরাকে কিছুই দিতে পারছেনা সিফাত।কিন্তু মেয়েটা সিফাতের জন্মদিনে অনেক কিছুই দিয়েছিল।নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হল সিফাতের।ভাবে, তার মত খারাপ দুনিয়ায় দ্বিতীয় নেই।
হাত থেকে সিগারেট ফেলে দেয় সিফাত।নিরাকে ফোন দিতে মোবাইল হাতে নেয়।আজ নিরাকে বলবে তার সমস্যার কথা।কথা গুলো শুনে হয়ত নিরা সম্পর্ক শেষ করে দেবে।তাতেও কোন আপসুস নেই সিফাতের।হয়ত নিরার সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে চোখ জোড়া ঝাপসা হবে।তাতেও সমস্যা নেই।তবুও নিরার কাছে বার বার ছোট হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচবে।
কল দেয় নিরাকে।কয়েক সেকেন্ডেই কল ধরে মেয়েটি।
-হ্যালো।(নিরা)
-শুভ জন্মদিন।
-হয়ে গেল Wish??
-সরি।
-কেন?
-আসলে……..
-থাক বলতে হবে না।তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
হয়ত আবারো অপমান হতে হবে সিফাতের।মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায় তার।তবে এই ভেবে শান্তি পায় এখানেই হয়ত শেষ।
দুজনেই নদীর ধারে বসে আছে।নিরার হাতে কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।নিরা আজ নিল ড্রেস পড়ে এসেছে।খুব সুন্দর লাগছে তাকে।কিন্তু সিফাতের খুব হিংসা হচ্ছে। সে ভাবে 'ব্রেকাপ করতে আসলে ও সেজেগুজে আসতে হয়?'
তবুও সিফাতের চোখ দুটো বার বার নিরার দিকেই যাচ্ছে। দুজনেই চুপ।সিফাত নিরবতার অবসান ঘটাল।
-নিরা,সরি।
-আবার!!
-হুম,আসলে তোমার বার্থডে তে সামান্য Wish করা ছাড়া কিছু দিতে পারিনি।
-ভালবাস আমায়?
-গরীবদের আবার ভালবাসা?
-কে বলেছে তুমি গরিব?
-আমি জানি।
-তুমি গরীব না,তুমি মন থেকে ধনী।
-মানে??
-মানে,তুমি ভালবাস আমায় তাতেই যথেষ্ট।
-এই নাও।(হাতে থাকা প্যাকেটটি সিফাতের দিকে বাড়িয়ে দিল)
-কি আছে এতে?
-তোমার জন্যে ২টা শার্ট, আর প্যান্ট।
-কেন কিনতে গেলে?আমার তো অনেক আছে।
-চুপ কর।আমি জানি তুমি নতুন কাপড় কবে পড়েছ মনে নেই।তোমার অবস্থা আমি জানি।
ফুফিয়ে কেঁদে উঠল সিফাত।চোখ জোড়া ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে।
-আহ!কাঁদছ কেন?
-আমাকে এত অপমান করার মানে কি?
-কই অপমান করলাম।সামান্য কিছু দিলাম মাত্র।শুন!!বিয়ের আগ পর্যন্ত সব খরচ আমার।বিয়ের পর আর এক পয়সাও দিব না।হুহ।তখন তোমার টাকায় সংসার চলবে। হিহিহি।
হাসছে নিরা।সিফাত মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে নিরার দিকে।নিরা হাসলে গালে টোল পড়ে।আহ!কি সুন্দর লাগে তখন নিরাকে।
সিফাত ভাবে,কি সুন্দর মেয়েটি,কিন্তু অনেক বোকা।সব কিছু যেন খুব সহজে মেনে নেয়।কিন্তু এমন করে আর কতদিন চলবে?হয়ত নিরাও একসময় হাপিয়ে উঠবে।

No comments:

Post a Comment