আমি আত্মহত্যা করবো, আমি আর বেশিদিন বাচতে চাইনা ডাক্তার।
--- কি সমস্যা আপনার?
--- আমার আর এসব কষ্ট সহ্য হয়না।
মেয়েটির এরকুম পাগলামীতে আর এরকম আজগুবিকথাতে ডাক্তারটি খুব বেশি অবাক হলেন না, কেননা পেশার খাতিরে প্রতিদিন এরুপ হাজারো পেশেন্টের সম্মুখীন তাকে হতে হয়। তাহলে এ আর নতুন কি, একটু মুচকি হেসে, রোগীটির দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন, অতঃপর গম্ভীর কন্ঠে বললেন --- তা আপনার মা-- বাবা বললেন যে আপনে নাকি অনেকবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছেন।
---- হুম, কিন্তু মা বাবার জন্য পারিনি।
---- তা আত্মহত্যা করার কারনটা কি জানতে পারি।
মেয়েটি ডাক্তারের কথায় কোনো উওর না দিয়ে, শুধু চোখের জল ফেললো।
ডাক্তার তখন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো --- টিস্যু দিবো।
মেয়েটি তখন মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো , কিছুসময় চুপ থেকে অতঃপর বলতে লাগলো ----সাঈদ আমার স্বামী যাকে ভালোবেসে আমি বিয়ে করেছিলাম, ৩ বছরের রিলেশন তারপর বিয়ে, হাজারো স্বপ্ন নিয়ে দুজনে পথ চলতে লাগলাম, কিন্তু বুঝতে পারিনি ও আমাকে মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে বিধাথার কাছে চলে যাবে। বিয়ের আজ ১ বছর পর ও গত ১ মাস আগে গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করে মারা যায়।
কথাটি বলতেই মেয়েটির কন্ঠ থরথর করে কাপতে লাগলো, ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে মেয়েটি তখন বলতে লাগলো ----- জানো আপু আমি না ওকে ছাড়া এক মিনিট ও অন্য কিছু ভাবতে পারিনা, আমার সবকিছু কেমন জানি অসহ্য লাগছে, আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারছিনা, আমার আর এ কষ্ট সহ্য হচ্ছেনা আর তাই আমি মরে যেতে চাই।বাস্তবতা কেন এমন নিঠুর?
মেয়েটির কথাগুলো শুনে ডাক্তার তখন মুচকি হাসলো, হাতের কাছে একটা কলম নিয়ে তার দিকে কিছুসময় চেয়ে রইলো।
ডাক্তারের এরুপ আচরন মেয়েটিকে খুব ভাবালো, মেয়েটির মনে হলো ----- প্রতিদিন আমার মতো এরুপ হাজারো সমস্যার পেশেন্টকে দেখতে- দেখতে হয়তো একসময় এই ডাক্তারি পেশার মানুষগুলো খুব নিষ্ঠুর হয়ে যায়। একটু আফসোসেরর ছায়া ও তার মুখের পানে দেখা গেলো না! কিন্তু আদৌ কি এই কারনেই ডাক্তার আমার কথাগুলো শুনে হাসলেন নাকি অন্য কোনো ব্যাপার আছে?
এই প্রশ্নের উওর পাওয়ার জন্য মেয়েটি তখন গম্ভীর কন্ঠে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলো ---- আচ্ছা আপনে হাসলেন কেন?
ডাক্তার তখন বললো ---- এটা না হয় না জানলেন, আসুন আপনাকে একটা আমি গল্প শুনাই।
মেয়েটি তখন রাগে লাল হয়ে গেলো, অবশ্য রাগবারেই তো কথা কেননা ও ডিপ্রেশনে ভুগছে আর এমন সময় কেউ যদি এরুপ কথা বলে আর তা যদি ডাক্তারের কাছ থেকে শুনা হয়, তাহলে তো খারাপ লাগার কথাই।
---- কি ব্যাপার শুনবেন না গল্পটা?
ডাক্তারের কথায় মেয়েটি নিজের রাগটাকে সংযত করে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।
ডাক্তার তখন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটু হাসি মুখে বললো ---- শুনুন তাহলে, ----- মেয়েটির বয়স যখন চার বছর হলো, তখন একদিন হঠ্যাৎ করে মেয়েটির বাবা মারা যায়, , আর মেয়েটির মা তখন অসহায় নিরুপায় ছিলো,স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়লেন তিনি আর এসময় মেয়েটির বাবার ভাইয়েরা মেয়েটির মাকেআর মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ১ সন্তান নিয়ে অসহায় জননী, নিজের মায়ের বাড়িতে চলে আসে,১ বছর মেয়েটির মা মানুষের নানা কথাশুনে কোনোভাবে মেয়েকে আকড়ে ধরে দিন পার করতে থাকে ,কিন্তু মাজের বখাটে ছেলেদের চক্ষু থেকে নিজের মেয়েকে বাচানোর জন্য, মেয়ের সুখের জন্য মেয়েটির মা আবার মেয়েকে বিয়ে দেয়। মেয়েটি তখন মায়ের কাছে অনেক আকুতি- মিনুতি করে তার সন্তানকে ছেড়ে সে যাবেনা, কিন্তু মেয়েটির মা কোন কথাই শুনলোনা মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দেয়, বিয়ের সময় সেই চার বছরের মেয়েটির বয়স ছিলো ৬ বছর, মেয়েটি তখন অবাক দৃষ্টিতে মায়ের চলে যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে রইলো,দুচোখ বেয়ে জল পড়লো আর মুখ দিয়ে --- মা,মা বলে ডাকলো।
যেই বয়সে মেয়েটি পুতুল নিয়ে খেলবে সেই বয়সে মেয়েটি অনেক বুঝের হয়ে গেলো, অনেক কিছু বুঝতে শিখে গেলো। সারাদিন নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতো,আর সমাজের মানুষগুলোর নানা কথা শুনতো, জানো একটা সময় না মেয়েটি নিজের নাম ও ভুলে যায় কেনো জানো, কারন সমাজের মানুষ থেকে এতিম কথাটি শুনতে- শুনতে একটা সময় সে ভাবতে লাগলো হয়তো আমার নাম এতিমেই।
ডাক্তারের কথাগুলো শুনে পেশেন্টি তখন বলে উঠলো ---- আচ্ছা মেয়েটির মা কি ওকে আর দেখতে আসেনি।
ডাক্তার তখন একটু অট্রহাসি দিয়ে বললো --- দেখতে আসা! আসলে মেয়েটির মায়ের যার সাথে বিয়ে হয়েছিলো সে মেয়েটির মাকে নিয়ে কোথায় যেনো চলে যায়, যাতে মা তার মেয়ের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে না পারে।
নানির আদর- স্নেহে মেয়েটি কোনোভাবে বড় হতে থাকে, তারপর পড়াশুনা করতে থাকে,নানি অনেক কষ্টে মানুষের বাড়িতে কাজ করে - করে মেয়েটিকে ইন্টার অবদি পড়ায়, আর এদিকে মেয়েটির বিয়ের জন্য অনেক পাএপক্ষ আসতে থাকে, অবশ্য আসবেই না বা কেন, সোনাবরন গায়ের রং যার, হরিনের মতো চোখ যার আর রক্তজবা ফুলের ন্যায় ঠোট যার তাকে তো যে কোনো ছেলেই পছন্দ করবে। মেয়েটির ক্ষেএে ও তার বীপরিত কিছু হলোনা।
।
অনেক ছেলেই মেয়েটিকে পছন্দ করে, কিন্তু যখনি জানতে পারে ও এতিম, তখনি সবাই পিছিয়ে যায়। কিন্তু মেয়েটি প্রতিদিন এই বাস্তবতার সাথে যুদ্ধে করে জিবন পথে এগিয়ে চলছিলো।
মেয়েটি সেদিন ও দমে যায়নি।
পেশেন্ট তখন বিস্মিত কন্ঠে বললো --- কোনদিন।
ডাক্তার তখন অট্রহাসি হেসে বললো --- যেদিন মেয়েটির এইচ. এস. সি পরীক্ষা ছিলো আর, পরীক্ষার দিন সকাল নানির মৃত্যু! মেয়েটি দমে যায়নি, মেয়েটি চোখের জল মুছে বুকে নিষ্ঠুরতার পাথর বেধে নানিকে দাফন দিয়ে পরীক্ষা দিতে চলে যায়, সেদিন মেয়েটিকে সমাজের মানুষগুলো স্বার্থপর বলে আখ্যায়িত করেছে, নিষ্ঠুর মনের মানুষ বলেছে, কিন্তু কেউ একবার ও দেখলোনা মেয়েটি নিজের কষ্টটাকে বুকের মাঝে লুকিয়ে কিভাবে বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করছে।
সেদিন যদি মেয়েটি শোকে, কষ্টে জিবনপথে থেমে যেতো তাহলে তার নানি ও হেরে যেতো যিনি এতো কষ্ট করে মানুষের বাড়িতে- বাড়িতে কাজ করে -- করে মেয়েটিকে এতদূর অবদি নিয়ে আনলো আর শেষে গিয়ে মেয়েটি হেরে যাবে? না, এটা হয়না আর এই চিন্তা থেকেই মেয়েটি বাস্তবতাকে খুব সহজে মেনে নিয়েছে।
পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে আসার পর মেয়েটি অসহায় হয়ে পড়ে, বেড়ার ঘর, বেড়ার ফাক দিয়ে শকুনের চোখ থেকে এতোদিন মেয়েটিকে তার নানি হয়তো বাচিয়েছে, কিন্তু এখন কে বাচাবে এই চিন্তা করতে- করতে মেয়েটির চোখ থেকে একফোটা বৃষ্টির জল গড়িয়ে পড়ে পরক্ষণে নিমিষেই নিজেকে শক্ত করে ফেলে এই ভেবে যে --- না আমার কালকে পরীক্ষা আছে, আমাকে পড়তে হবে এসব ভাবলে হবেনা।
সারারাত প্রদীপের ক্ষীণ আলোয় মেয়েটি বইয়ের পানে চেয়ে রইলো আর কিছুসময় পর- পর ভয়ে কেপে উঠতো, এই বুঝি কোনো শিয়াল তাকে ছিড়ে খাবে, এই বুঝি পাড়ার সেই বখাটে ছেলেটা তাকে নিজের খাদ্য হিসেবে চাইবে।
এই ভাবনাগুলো যখন মেয়েটিকে গ্রাস করলো মেয়েটি তখন থরথর করে কাপতে লাগলো, তারউপরে সারাদিন পেটে কোনো খাবার পড়ে নি,ক্ষুদায় আর ভয়ে মেয়েটি ধীরে-ধীরে মৃত্যুপথের দিকে যেনো ঢলে পড়ছে, কিন্তু না মেয়েটি বাস্তবতার কাছে সহজে হেরে যায়নি, সেদিনের পরেরদিন মেয়েটি ঘুম থেকে উঠে দেখে পাশের ঘরের মহিলাটি এক প্লেট ভাত আর একটু আলুর বর্তা নিয়ে মেয়েটির সামনে এসে ছলছল চোখে বলতে লাগলো --- যতটুকু সামর্থ্য আছে ততটুকুই দিতে পেরেছি।
মেয়েটি তখন হাসিমুখে সেই খাবারটাকে হাতে নিয়ে পাগলের মতো খেতে লাগলো। মহিলাটি তখন মেয়েটিকে বললো --- আজ থেকে তুই আমার ঘরে ঘুমাস।
কথাটি শুনে মেয়েটি একগাল হাসি দিয়ে, মহিলাটির পায়ের কাছে গিয়ে বললো --- চির ঋনি থাকলাম আপনার কাছে।
কিন্তু কি জানো মেয়েটির কপালে এ সুখ ও সইলো না, কথাটি বলেই ডাক্তারটি নিশ্চুপ হয়ে গেলো।
পেশেন্ট তখন আগ্রহের সহীতে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসসা করলো --- মানে?
মানে! ওই যে মহিলার স্বামী গভীর রজনীতে শকুনের চোখ নিয়ে, বিকৃত মন নিয়ে মেয়েটিকে অফার দিতো, তার ক্ষুদার্থ নিবারনের জন্য। আর মেয়েটি তখন বুঝে ফেলে এই পৃথিবীর মানুষগুলো বড়ই নিকৃষ্ট।
।
মেয়েটি এসব কথা যখন মহিলাটিকে জানায়, মহিলাটি তখন মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়, আর সমাজের মানুষগুলোর সামনে মহিলাটির স্বামী মেয়েটিকে ইচ্ছামতো মারে। কিন্তু একটা লোক ও আসেনি মেয়েটিকে বাচাতে।
অবশেষে মেয়েটি গিয়ে সেই লোকটির পায়ে পড়ে অজর দ্বারা কাদে আর বলে --- আজ আমি এতিম বলে আমার কেউ নেই বলে আমাকে এভাবে মারছো, একদিন তোমরা এর ফল পাবে।
কথাটি লোকটি শুনা মাএই মেয়েটিকে ধুম করে একটা লাথি মারলো, লাথিটা খেয়ে মেয়েটি একটা ছেলের গাড়ির সামনে গিয়ে পড়লো, ছেলেটি তখন মেয়েটিকে আলতো করে ধরে দাড় করালো, অতঃপর সেই বদমাইশ লোকটির সামনে গিয়ে তাকে কসে একটা থাপ্পড় মারলো, আর মেয়েটিকে হসপিটালে নিয়ে গেলো, মেয়েটির চিকিৎসা করালো তারপর মেয়েটির মুখ থেকে তার সব কথা শুনলো।
মেয়েটির সব কথা শুনে ছেলেটির মেয়েটির প্রতি একটা ভালো লাগা জন্মে, অতঃপর ছেলেটি কেনোকিছু না ভেবেই মেয়েটিকে নিয়ে সোজা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেললো।
মেয়েটি ও কোনোকিছু না ভেবেই, খারাপ মানুষের হাত থেকে বাচার জন্য বিয়েতে রাজি হলো, দুজনের বিয়ে হলো, দুচোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মেয়েটি ছেলেটির হাত ধরে পথ চলতে লাগলো।
কিন্তু এই পথ চলাটা ও একটা সময় নিমিষে শেষ হয়ে গেলো।
ডাক্তারটি এরুপ কথায় পেশেন্টি তখন মায়াবী কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো --- কেন কি হয়েছে?
ডাক্তারটি তখন অট্রহাসি দিয়ে বললো --- নতুন করে জিবনটা শুরু করার আগেই শেষ হয়ে গেলো,
--- মানে?
সেদিন হয়তো ছেলেটি আবেগের বর্শে কিংবা মায়ার খাতিরে মেয়েটিকে বিয়ে করেছে, ছেলেটি হয়তো মেয়েটিকে নিজের ওয়াইফ হিসাবে মেনে নিয়েছিলো, কিন্তু ছেলেটির পরিবার মেয়েটিকে মেনে নিতে পারেনি, কেননা ছেলের পরিবার ছিলো সমাজের আর পাচটা ধনীদের তালিকায় প্রথম। আর সেখানে এরুপ এতিম, অসহায় একটা মেয়ের স্হান তাদের বাড়িতে কাজের লোক ছাড়া আর কিছুই না । তবুও হাজার অত্যাচার সহ্য করে কাজের লোকের মতো মেয়েটি দিনগুলো অতিক্রম করতো লাগলো । অনেকসময় খাবার ও জুটতো না মেয়েটির কপালে যদি তার স্বামী বাড়িতে না থাকতো। মেয়েটির শরীরের প্রতিটি স্হানে দাগ, আর দাগ। আর এই সবগুলো দাগ হচ্ছে গরীব পরিবারের মেয়ে হয়ে বড়লোক বাড়ির ছেলেকে বশ করার দোষে। মেয়েটি না তখন বুঝতোনা বশ কাকে বলে, মেয়েটির স্বামী প্রতিদিন নিজের ওয়াইফের এরুপ অত্যাচার দেখতে না পেরে অনেকসময় প্রতিবাদ করতো।কিন্তু কোনো লাভ হতো না, তবে মেয়েটি এতোকিছুর পর ও নিজের পড়াশুনাটা চালিয়ে গেলো। আর এর জন্য মেয়েটির স্বামী মেয়েটিকে আপ্রাণ সাহায্য করে।
তবে মেয়োটির কপালে এটুকু সুখ ও সইলো না, মাথা ঘুচবার যেটুকু ঠাই পেলো বিধাথা সেটা ও কেড়ে নিলো।সংসার জিবনের
২ বছর যেতে না যেতেই মেয়েটির স্বামী স্টোক করে মারা যায়।
সেদিন মেয়েটি হয়তো খুব বেশি কষ্ট পেয়েছিলো
, কিন্তু মেয়েটির চোখ থেকে সেদিন এক পশলা বৃষ্টি পড়লো না। কেননা মেয়েটি সব মেনে নিতে শিখেছে, মেয়েটি বুঝেছে বাস্তবতা অনেক নিঠুর। আর কাদলে তো কষ্টটা লাঘব হয় কিন্তু মেয়েটির কষ্টগুলোতো চোখের এক পশলা বৃষ্টি পড়লেই নিমিষে শেষ হয়ে যাবে এমন কষ্ট নয়।
মেয়েটিকে সেদিন শ্বশুরঘরের সবাই অপয়া বলে, ইচ্ছেমতো মেরে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।বাড়ির থেকে বের হবার সময় স্বামীর একটা ছবি আর স্বামীর একটা ডায়রী নিয়ে বেরিয়ে চলে আসে।
স্বামীর ছবিটাকে বুকে আকড়ে ধরে মেয়েটি যখন কাদতে লাগলো,তখন মেয়েটি বুঝতে পারলো বাস্তবতা বড় নিঠুর এর কাছে মানুষ সবসময় কষ্ট পায়।
সেদিনের পর থেকে মেয়েটি বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে বাচার চেষ্টা চালিয়ে গেলো, প্রতিটা পদে পদে নিজের জিবনকে সহজ করে নিলো, কেননা মেয়েটি বুঝেছে যদি তুমি জিবনকে সহজ ভাবো তাহলে জিবন সহজ আর যদি তুমি জিবনকে কঠিন ভাবো তাহলো জিবন কঠিন।
মেয়েটি অনেকবার মৃত্যুপথ থেকে ও সংগ্রাম করে ফিরে এসেছে। কিন্তু কি জানো, মেয়েটি একটি বারের জন্য ও এই কথা কখনো ভাবেনি --- যে আমি মরে যাবো, আমি আত্মহত্যা করবো।
বরং সবসময় ভেবেছে একটা কথাই --- নাহ! এতো সহজে জিবনের কাছে হেরে যাবোনা।
আর তার এই ভাবনাই আজ তাকে সাফল্যের দারপ্রান্তে এনেছে, নতুন করে বাচতে শিখিয়েছে।আর আজ সেই মেয়েটি নতুন করে বাচতে ও শিখে গেছে।
আর আপনে! এইটুকু কষ্টতে জিবন পথে হারমানবেন। শুনুন কষ্টকে সময় দিন। আজ যেই জিনিসটা আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে বিশ্বাস করুন একদিন সময়ের সাথে আপনে সব মেনে নিবেন কষ্টটাকে ভুলে যাবেন। আজ আপনার কাছে যেটা important সময়ের সাথে - সাথে একটা সময় সেটা মূল্যহীন হয়ে যাবে।
আপনেই ভাবুননা ছোটকালে আপনে একটা খেলনা পাননি দেখে কত কেঁদেছেন আর আজ সে কথা হয়তো আপনার মনে পড়লে আপনে হাসেন আর নিজেই নিজেকে বলেন --- ওফ কত বোকাই না ছিলাম তখন আমি।
তাই বলি সবকিছুকে সময় দিন দেখবে সময়ে সাথে- সাথে একটা সময় আপনে সব মেনে নিবেন। আর আত্মহত্যা করার ভুত মাথায় চাপলে এরুকুম কারো জিবন কাহিনীর কথা ভাববেন আর নিজেই নিজেকে এই বলে শান্তনা দিবেন যে -- এতো কষ্ট, সংগ্রাম, দুঃখ, বেদনা পাওয়ার পর ও এরকম অনেক মানুষ হাসি মুখে জিবন যুদ্ধে হেরে না গিয়ে সামনে পথ চলছে, তাহলে আমি কেনো হেরে যাবো?
ডাক্তারের কথাগুলো শুনে মেয়েটি চোখের জল মুছে ফেললো, মুচকি হেসে ডাক্তারকে বললো ------ ধন্যবাদ, আপনার কাছে চির ঋনি রইলাম।
ডাক্তারটি তখন মুচকি হেসে বললো এতে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছুই নেই, এটা আমার কাজ, প্রতিদিন আপনার মত এরুপ হাজারো পেশেন্টকে এই গল্পটা শুনিয়ে আবার নতুন করে তাদের বাচার অনুপ্রেরণা দেই। আর তারা আপনার মতোই আমাকে পরশেষে একটা ধন্যবাদ দেয়, নিজের কষ্টগুলোকে ভুলার চেষ্টা করে। আপনে এখন আসতে পারেন।
মেয়েটি তখন ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলো --- আর আপনে।
ডাক্তার তখন গম্ভীর কন্ঠে মেয়েটিকে বললো ---- আপনার মতো এরুপ কারো জন্য অপেক্ষা করবো, তাকে এই গল্পটা শুনিয়ে আবার বাচার অনুপ্রেরণা দিবো।
মেয়েটি তখন ডাক্তারের কথায় কোনো উওর না দিয়ে, চলে যেতে লাগলো, হঠ্যাৎ কি যেনো একটা মনে করে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলো --- আপনে কিন্তু বললেন না মেয়েটি এখন কোথায়,কি করছে?
ডাক্তার তখন মুচকি হেসে বললো -- মেয়েটি এখন আপনার সামনে, আর আপনার মতো কিছু মানুষকে বাচার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
মেয়েটি তখন অবাক দৃষ্টিতে ডাক্তারের পানে চেয়ে রইলেন আর ভাবলেন --- সময় আর বাস্তবতা মানুষকে কতটা নিষ্ঠুর করে দিতে পারে।বাস্তবতা বড়ই কঠিন।
--- কি সমস্যা আপনার?
--- আমার আর এসব কষ্ট সহ্য হয়না।
মেয়েটির এরকুম পাগলামীতে আর এরকম আজগুবিকথাতে ডাক্তারটি খুব বেশি অবাক হলেন না, কেননা পেশার খাতিরে প্রতিদিন এরুপ হাজারো পেশেন্টের সম্মুখীন তাকে হতে হয়। তাহলে এ আর নতুন কি, একটু মুচকি হেসে, রোগীটির দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন, অতঃপর গম্ভীর কন্ঠে বললেন --- তা আপনার মা-- বাবা বললেন যে আপনে নাকি অনেকবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছেন।
---- হুম, কিন্তু মা বাবার জন্য পারিনি।
---- তা আত্মহত্যা করার কারনটা কি জানতে পারি।
মেয়েটি ডাক্তারের কথায় কোনো উওর না দিয়ে, শুধু চোখের জল ফেললো।
ডাক্তার তখন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো --- টিস্যু দিবো।
মেয়েটি তখন মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো , কিছুসময় চুপ থেকে অতঃপর বলতে লাগলো ----সাঈদ আমার স্বামী যাকে ভালোবেসে আমি বিয়ে করেছিলাম, ৩ বছরের রিলেশন তারপর বিয়ে, হাজারো স্বপ্ন নিয়ে দুজনে পথ চলতে লাগলাম, কিন্তু বুঝতে পারিনি ও আমাকে মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে বিধাথার কাছে চলে যাবে। বিয়ের আজ ১ বছর পর ও গত ১ মাস আগে গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করে মারা যায়।
কথাটি বলতেই মেয়েটির কন্ঠ থরথর করে কাপতে লাগলো, ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে মেয়েটি তখন বলতে লাগলো ----- জানো আপু আমি না ওকে ছাড়া এক মিনিট ও অন্য কিছু ভাবতে পারিনা, আমার সবকিছু কেমন জানি অসহ্য লাগছে, আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারছিনা, আমার আর এ কষ্ট সহ্য হচ্ছেনা আর তাই আমি মরে যেতে চাই।বাস্তবতা কেন এমন নিঠুর?
মেয়েটির কথাগুলো শুনে ডাক্তার তখন মুচকি হাসলো, হাতের কাছে একটা কলম নিয়ে তার দিকে কিছুসময় চেয়ে রইলো।
ডাক্তারের এরুপ আচরন মেয়েটিকে খুব ভাবালো, মেয়েটির মনে হলো ----- প্রতিদিন আমার মতো এরুপ হাজারো সমস্যার পেশেন্টকে দেখতে- দেখতে হয়তো একসময় এই ডাক্তারি পেশার মানুষগুলো খুব নিষ্ঠুর হয়ে যায়। একটু আফসোসেরর ছায়া ও তার মুখের পানে দেখা গেলো না! কিন্তু আদৌ কি এই কারনেই ডাক্তার আমার কথাগুলো শুনে হাসলেন নাকি অন্য কোনো ব্যাপার আছে?
এই প্রশ্নের উওর পাওয়ার জন্য মেয়েটি তখন গম্ভীর কন্ঠে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলো ---- আচ্ছা আপনে হাসলেন কেন?
ডাক্তার তখন বললো ---- এটা না হয় না জানলেন, আসুন আপনাকে একটা আমি গল্প শুনাই।
মেয়েটি তখন রাগে লাল হয়ে গেলো, অবশ্য রাগবারেই তো কথা কেননা ও ডিপ্রেশনে ভুগছে আর এমন সময় কেউ যদি এরুপ কথা বলে আর তা যদি ডাক্তারের কাছ থেকে শুনা হয়, তাহলে তো খারাপ লাগার কথাই।
---- কি ব্যাপার শুনবেন না গল্পটা?
ডাক্তারের কথায় মেয়েটি নিজের রাগটাকে সংযত করে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।
ডাক্তার তখন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটু হাসি মুখে বললো ---- শুনুন তাহলে, ----- মেয়েটির বয়স যখন চার বছর হলো, তখন একদিন হঠ্যাৎ করে মেয়েটির বাবা মারা যায়, , আর মেয়েটির মা তখন অসহায় নিরুপায় ছিলো,স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়লেন তিনি আর এসময় মেয়েটির বাবার ভাইয়েরা মেয়েটির মাকেআর মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ১ সন্তান নিয়ে অসহায় জননী, নিজের মায়ের বাড়িতে চলে আসে,১ বছর মেয়েটির মা মানুষের নানা কথাশুনে কোনোভাবে মেয়েকে আকড়ে ধরে দিন পার করতে থাকে ,কিন্তু মাজের বখাটে ছেলেদের চক্ষু থেকে নিজের মেয়েকে বাচানোর জন্য, মেয়ের সুখের জন্য মেয়েটির মা আবার মেয়েকে বিয়ে দেয়। মেয়েটি তখন মায়ের কাছে অনেক আকুতি- মিনুতি করে তার সন্তানকে ছেড়ে সে যাবেনা, কিন্তু মেয়েটির মা কোন কথাই শুনলোনা মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দেয়, বিয়ের সময় সেই চার বছরের মেয়েটির বয়স ছিলো ৬ বছর, মেয়েটি তখন অবাক দৃষ্টিতে মায়ের চলে যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে রইলো,দুচোখ বেয়ে জল পড়লো আর মুখ দিয়ে --- মা,মা বলে ডাকলো।
যেই বয়সে মেয়েটি পুতুল নিয়ে খেলবে সেই বয়সে মেয়েটি অনেক বুঝের হয়ে গেলো, অনেক কিছু বুঝতে শিখে গেলো। সারাদিন নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতো,আর সমাজের মানুষগুলোর নানা কথা শুনতো, জানো একটা সময় না মেয়েটি নিজের নাম ও ভুলে যায় কেনো জানো, কারন সমাজের মানুষ থেকে এতিম কথাটি শুনতে- শুনতে একটা সময় সে ভাবতে লাগলো হয়তো আমার নাম এতিমেই।
ডাক্তারের কথাগুলো শুনে পেশেন্টি তখন বলে উঠলো ---- আচ্ছা মেয়েটির মা কি ওকে আর দেখতে আসেনি।
ডাক্তার তখন একটু অট্রহাসি দিয়ে বললো --- দেখতে আসা! আসলে মেয়েটির মায়ের যার সাথে বিয়ে হয়েছিলো সে মেয়েটির মাকে নিয়ে কোথায় যেনো চলে যায়, যাতে মা তার মেয়ের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে না পারে।
নানির আদর- স্নেহে মেয়েটি কোনোভাবে বড় হতে থাকে, তারপর পড়াশুনা করতে থাকে,নানি অনেক কষ্টে মানুষের বাড়িতে কাজ করে - করে মেয়েটিকে ইন্টার অবদি পড়ায়, আর এদিকে মেয়েটির বিয়ের জন্য অনেক পাএপক্ষ আসতে থাকে, অবশ্য আসবেই না বা কেন, সোনাবরন গায়ের রং যার, হরিনের মতো চোখ যার আর রক্তজবা ফুলের ন্যায় ঠোট যার তাকে তো যে কোনো ছেলেই পছন্দ করবে। মেয়েটির ক্ষেএে ও তার বীপরিত কিছু হলোনা।
।
অনেক ছেলেই মেয়েটিকে পছন্দ করে, কিন্তু যখনি জানতে পারে ও এতিম, তখনি সবাই পিছিয়ে যায়। কিন্তু মেয়েটি প্রতিদিন এই বাস্তবতার সাথে যুদ্ধে করে জিবন পথে এগিয়ে চলছিলো।
মেয়েটি সেদিন ও দমে যায়নি।
পেশেন্ট তখন বিস্মিত কন্ঠে বললো --- কোনদিন।
ডাক্তার তখন অট্রহাসি হেসে বললো --- যেদিন মেয়েটির এইচ. এস. সি পরীক্ষা ছিলো আর, পরীক্ষার দিন সকাল নানির মৃত্যু! মেয়েটি দমে যায়নি, মেয়েটি চোখের জল মুছে বুকে নিষ্ঠুরতার পাথর বেধে নানিকে দাফন দিয়ে পরীক্ষা দিতে চলে যায়, সেদিন মেয়েটিকে সমাজের মানুষগুলো স্বার্থপর বলে আখ্যায়িত করেছে, নিষ্ঠুর মনের মানুষ বলেছে, কিন্তু কেউ একবার ও দেখলোনা মেয়েটি নিজের কষ্টটাকে বুকের মাঝে লুকিয়ে কিভাবে বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করছে।
সেদিন যদি মেয়েটি শোকে, কষ্টে জিবনপথে থেমে যেতো তাহলে তার নানি ও হেরে যেতো যিনি এতো কষ্ট করে মানুষের বাড়িতে- বাড়িতে কাজ করে -- করে মেয়েটিকে এতদূর অবদি নিয়ে আনলো আর শেষে গিয়ে মেয়েটি হেরে যাবে? না, এটা হয়না আর এই চিন্তা থেকেই মেয়েটি বাস্তবতাকে খুব সহজে মেনে নিয়েছে।
পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে আসার পর মেয়েটি অসহায় হয়ে পড়ে, বেড়ার ঘর, বেড়ার ফাক দিয়ে শকুনের চোখ থেকে এতোদিন মেয়েটিকে তার নানি হয়তো বাচিয়েছে, কিন্তু এখন কে বাচাবে এই চিন্তা করতে- করতে মেয়েটির চোখ থেকে একফোটা বৃষ্টির জল গড়িয়ে পড়ে পরক্ষণে নিমিষেই নিজেকে শক্ত করে ফেলে এই ভেবে যে --- না আমার কালকে পরীক্ষা আছে, আমাকে পড়তে হবে এসব ভাবলে হবেনা।
সারারাত প্রদীপের ক্ষীণ আলোয় মেয়েটি বইয়ের পানে চেয়ে রইলো আর কিছুসময় পর- পর ভয়ে কেপে উঠতো, এই বুঝি কোনো শিয়াল তাকে ছিড়ে খাবে, এই বুঝি পাড়ার সেই বখাটে ছেলেটা তাকে নিজের খাদ্য হিসেবে চাইবে।
এই ভাবনাগুলো যখন মেয়েটিকে গ্রাস করলো মেয়েটি তখন থরথর করে কাপতে লাগলো, তারউপরে সারাদিন পেটে কোনো খাবার পড়ে নি,ক্ষুদায় আর ভয়ে মেয়েটি ধীরে-ধীরে মৃত্যুপথের দিকে যেনো ঢলে পড়ছে, কিন্তু না মেয়েটি বাস্তবতার কাছে সহজে হেরে যায়নি, সেদিনের পরেরদিন মেয়েটি ঘুম থেকে উঠে দেখে পাশের ঘরের মহিলাটি এক প্লেট ভাত আর একটু আলুর বর্তা নিয়ে মেয়েটির সামনে এসে ছলছল চোখে বলতে লাগলো --- যতটুকু সামর্থ্য আছে ততটুকুই দিতে পেরেছি।
মেয়েটি তখন হাসিমুখে সেই খাবারটাকে হাতে নিয়ে পাগলের মতো খেতে লাগলো। মহিলাটি তখন মেয়েটিকে বললো --- আজ থেকে তুই আমার ঘরে ঘুমাস।
কথাটি শুনে মেয়েটি একগাল হাসি দিয়ে, মহিলাটির পায়ের কাছে গিয়ে বললো --- চির ঋনি থাকলাম আপনার কাছে।
কিন্তু কি জানো মেয়েটির কপালে এ সুখ ও সইলো না, কথাটি বলেই ডাক্তারটি নিশ্চুপ হয়ে গেলো।
পেশেন্ট তখন আগ্রহের সহীতে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসসা করলো --- মানে?
মানে! ওই যে মহিলার স্বামী গভীর রজনীতে শকুনের চোখ নিয়ে, বিকৃত মন নিয়ে মেয়েটিকে অফার দিতো, তার ক্ষুদার্থ নিবারনের জন্য। আর মেয়েটি তখন বুঝে ফেলে এই পৃথিবীর মানুষগুলো বড়ই নিকৃষ্ট।
।
মেয়েটি এসব কথা যখন মহিলাটিকে জানায়, মহিলাটি তখন মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়, আর সমাজের মানুষগুলোর সামনে মহিলাটির স্বামী মেয়েটিকে ইচ্ছামতো মারে। কিন্তু একটা লোক ও আসেনি মেয়েটিকে বাচাতে।
অবশেষে মেয়েটি গিয়ে সেই লোকটির পায়ে পড়ে অজর দ্বারা কাদে আর বলে --- আজ আমি এতিম বলে আমার কেউ নেই বলে আমাকে এভাবে মারছো, একদিন তোমরা এর ফল পাবে।
কথাটি লোকটি শুনা মাএই মেয়েটিকে ধুম করে একটা লাথি মারলো, লাথিটা খেয়ে মেয়েটি একটা ছেলের গাড়ির সামনে গিয়ে পড়লো, ছেলেটি তখন মেয়েটিকে আলতো করে ধরে দাড় করালো, অতঃপর সেই বদমাইশ লোকটির সামনে গিয়ে তাকে কসে একটা থাপ্পড় মারলো, আর মেয়েটিকে হসপিটালে নিয়ে গেলো, মেয়েটির চিকিৎসা করালো তারপর মেয়েটির মুখ থেকে তার সব কথা শুনলো।
মেয়েটির সব কথা শুনে ছেলেটির মেয়েটির প্রতি একটা ভালো লাগা জন্মে, অতঃপর ছেলেটি কেনোকিছু না ভেবেই মেয়েটিকে নিয়ে সোজা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেললো।
মেয়েটি ও কোনোকিছু না ভেবেই, খারাপ মানুষের হাত থেকে বাচার জন্য বিয়েতে রাজি হলো, দুজনের বিয়ে হলো, দুচোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মেয়েটি ছেলেটির হাত ধরে পথ চলতে লাগলো।
কিন্তু এই পথ চলাটা ও একটা সময় নিমিষে শেষ হয়ে গেলো।
ডাক্তারটি এরুপ কথায় পেশেন্টি তখন মায়াবী কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো --- কেন কি হয়েছে?
ডাক্তারটি তখন অট্রহাসি দিয়ে বললো --- নতুন করে জিবনটা শুরু করার আগেই শেষ হয়ে গেলো,
--- মানে?
সেদিন হয়তো ছেলেটি আবেগের বর্শে কিংবা মায়ার খাতিরে মেয়েটিকে বিয়ে করেছে, ছেলেটি হয়তো মেয়েটিকে নিজের ওয়াইফ হিসাবে মেনে নিয়েছিলো, কিন্তু ছেলেটির পরিবার মেয়েটিকে মেনে নিতে পারেনি, কেননা ছেলের পরিবার ছিলো সমাজের আর পাচটা ধনীদের তালিকায় প্রথম। আর সেখানে এরুপ এতিম, অসহায় একটা মেয়ের স্হান তাদের বাড়িতে কাজের লোক ছাড়া আর কিছুই না । তবুও হাজার অত্যাচার সহ্য করে কাজের লোকের মতো মেয়েটি দিনগুলো অতিক্রম করতো লাগলো । অনেকসময় খাবার ও জুটতো না মেয়েটির কপালে যদি তার স্বামী বাড়িতে না থাকতো। মেয়েটির শরীরের প্রতিটি স্হানে দাগ, আর দাগ। আর এই সবগুলো দাগ হচ্ছে গরীব পরিবারের মেয়ে হয়ে বড়লোক বাড়ির ছেলেকে বশ করার দোষে। মেয়েটি না তখন বুঝতোনা বশ কাকে বলে, মেয়েটির স্বামী প্রতিদিন নিজের ওয়াইফের এরুপ অত্যাচার দেখতে না পেরে অনেকসময় প্রতিবাদ করতো।কিন্তু কোনো লাভ হতো না, তবে মেয়েটি এতোকিছুর পর ও নিজের পড়াশুনাটা চালিয়ে গেলো। আর এর জন্য মেয়েটির স্বামী মেয়েটিকে আপ্রাণ সাহায্য করে।
তবে মেয়োটির কপালে এটুকু সুখ ও সইলো না, মাথা ঘুচবার যেটুকু ঠাই পেলো বিধাথা সেটা ও কেড়ে নিলো।সংসার জিবনের
২ বছর যেতে না যেতেই মেয়েটির স্বামী স্টোক করে মারা যায়।
সেদিন মেয়েটি হয়তো খুব বেশি কষ্ট পেয়েছিলো
, কিন্তু মেয়েটির চোখ থেকে সেদিন এক পশলা বৃষ্টি পড়লো না। কেননা মেয়েটি সব মেনে নিতে শিখেছে, মেয়েটি বুঝেছে বাস্তবতা অনেক নিঠুর। আর কাদলে তো কষ্টটা লাঘব হয় কিন্তু মেয়েটির কষ্টগুলোতো চোখের এক পশলা বৃষ্টি পড়লেই নিমিষে শেষ হয়ে যাবে এমন কষ্ট নয়।
মেয়েটিকে সেদিন শ্বশুরঘরের সবাই অপয়া বলে, ইচ্ছেমতো মেরে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।বাড়ির থেকে বের হবার সময় স্বামীর একটা ছবি আর স্বামীর একটা ডায়রী নিয়ে বেরিয়ে চলে আসে।
স্বামীর ছবিটাকে বুকে আকড়ে ধরে মেয়েটি যখন কাদতে লাগলো,তখন মেয়েটি বুঝতে পারলো বাস্তবতা বড় নিঠুর এর কাছে মানুষ সবসময় কষ্ট পায়।
সেদিনের পর থেকে মেয়েটি বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে বাচার চেষ্টা চালিয়ে গেলো, প্রতিটা পদে পদে নিজের জিবনকে সহজ করে নিলো, কেননা মেয়েটি বুঝেছে যদি তুমি জিবনকে সহজ ভাবো তাহলে জিবন সহজ আর যদি তুমি জিবনকে কঠিন ভাবো তাহলো জিবন কঠিন।
মেয়েটি অনেকবার মৃত্যুপথ থেকে ও সংগ্রাম করে ফিরে এসেছে। কিন্তু কি জানো, মেয়েটি একটি বারের জন্য ও এই কথা কখনো ভাবেনি --- যে আমি মরে যাবো, আমি আত্মহত্যা করবো।
বরং সবসময় ভেবেছে একটা কথাই --- নাহ! এতো সহজে জিবনের কাছে হেরে যাবোনা।
আর তার এই ভাবনাই আজ তাকে সাফল্যের দারপ্রান্তে এনেছে, নতুন করে বাচতে শিখিয়েছে।আর আজ সেই মেয়েটি নতুন করে বাচতে ও শিখে গেছে।
আর আপনে! এইটুকু কষ্টতে জিবন পথে হারমানবেন। শুনুন কষ্টকে সময় দিন। আজ যেই জিনিসটা আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে বিশ্বাস করুন একদিন সময়ের সাথে আপনে সব মেনে নিবেন কষ্টটাকে ভুলে যাবেন। আজ আপনার কাছে যেটা important সময়ের সাথে - সাথে একটা সময় সেটা মূল্যহীন হয়ে যাবে।
আপনেই ভাবুননা ছোটকালে আপনে একটা খেলনা পাননি দেখে কত কেঁদেছেন আর আজ সে কথা হয়তো আপনার মনে পড়লে আপনে হাসেন আর নিজেই নিজেকে বলেন --- ওফ কত বোকাই না ছিলাম তখন আমি।
তাই বলি সবকিছুকে সময় দিন দেখবে সময়ে সাথে- সাথে একটা সময় আপনে সব মেনে নিবেন। আর আত্মহত্যা করার ভুত মাথায় চাপলে এরুকুম কারো জিবন কাহিনীর কথা ভাববেন আর নিজেই নিজেকে এই বলে শান্তনা দিবেন যে -- এতো কষ্ট, সংগ্রাম, দুঃখ, বেদনা পাওয়ার পর ও এরকম অনেক মানুষ হাসি মুখে জিবন যুদ্ধে হেরে না গিয়ে সামনে পথ চলছে, তাহলে আমি কেনো হেরে যাবো?
ডাক্তারের কথাগুলো শুনে মেয়েটি চোখের জল মুছে ফেললো, মুচকি হেসে ডাক্তারকে বললো ------ ধন্যবাদ, আপনার কাছে চির ঋনি রইলাম।
ডাক্তারটি তখন মুচকি হেসে বললো এতে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছুই নেই, এটা আমার কাজ, প্রতিদিন আপনার মত এরুপ হাজারো পেশেন্টকে এই গল্পটা শুনিয়ে আবার নতুন করে তাদের বাচার অনুপ্রেরণা দেই। আর তারা আপনার মতোই আমাকে পরশেষে একটা ধন্যবাদ দেয়, নিজের কষ্টগুলোকে ভুলার চেষ্টা করে। আপনে এখন আসতে পারেন।
মেয়েটি তখন ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলো --- আর আপনে।
ডাক্তার তখন গম্ভীর কন্ঠে মেয়েটিকে বললো ---- আপনার মতো এরুপ কারো জন্য অপেক্ষা করবো, তাকে এই গল্পটা শুনিয়ে আবার বাচার অনুপ্রেরণা দিবো।
মেয়েটি তখন ডাক্তারের কথায় কোনো উওর না দিয়ে, চলে যেতে লাগলো, হঠ্যাৎ কি যেনো একটা মনে করে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলো --- আপনে কিন্তু বললেন না মেয়েটি এখন কোথায়,কি করছে?
ডাক্তার তখন মুচকি হেসে বললো -- মেয়েটি এখন আপনার সামনে, আর আপনার মতো কিছু মানুষকে বাচার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
মেয়েটি তখন অবাক দৃষ্টিতে ডাক্তারের পানে চেয়ে রইলেন আর ভাবলেন --- সময় আর বাস্তবতা মানুষকে কতটা নিষ্ঠুর করে দিতে পারে।বাস্তবতা বড়ই কঠিন।
No comments:
Post a Comment